জীবনের গল্প লিখতে এসে একটু থমকে যেতে হল! এই প্রথম বুঝতে পারলাম নিজের জীবনের দিকে নিজে একটা ‘বার্ডস আই পয়েন্ট অফ ভিউ’ থেকে তাকানো হয়নি কখনো!
ব্যাপারটা কঠিন এবং সচরাচর হয়না বললেই চলে। আমরা জীবনে চলতে গিয়ে দারুন ব্যস্ত বলে পেছনে ফিরে তাকানোর ব্যাপারটা বিরল এবং কখনও বিলাসিতাও হয়ে ওঠে। আসলে জীবনে কি কি ঘটেছে তার থেকে আমার জীবনবোধ টা আসলে কি সেটাই মনে হয় জীবনের আসল গল্প! বিমূর্ত এবং কাব্যিক ক্ষমতা না থাকলে সেটা বোঝা বা বলাটা হয়ত কঠিন।
আমার জীবনের কথা বলতে এসে মনে হচ্ছে ওটার চেয়েও মজার ব্যাপার আমি আজ জীবনের দিকে তাকিয়ে কি অনুভব করছি। কাজের ফাঁকে ভাবলাম এবার কিছু একটা লিখে ফেলব নাকি নিজের জীবনের গল্পটা নিয়ে। আমার সার্বক্ষনিক সঙ্গিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে একটু আনমনা হয়ে গেলাম। ইনি একটি ল্যাপটপ। আমার চিন্তায় তার কোন বিকার আছে মনে হলনা। একটু বিরক্তই হলাম। যত বুলি শুনতে পাই প্রযুক্তি মানুষের জীবন পালটে দিচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি সব ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছুই না। সব কাজে ল্যাপটপ এর কাছে ধরনা দিতে দিতে এতটাই অভ্যস্ত আমি এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমার জীবনের ব্যাপারে বেটা কিছু জানে কিনা দেখা যাক! নিজের জীবনটাকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে এমন সংকট এ পড়ব ভাবিনি!
আচ্ছা শৈশব নিয়ে শুরু করি। আমার জন্ম ঝিনাইদহ জেলার কালি নদীর তীর ঘেষে জেগে উঠা ছোট্ট গ্রাম আগুনিয়াপাড়া। আর সেটা আজ থেকে ৩৩ বছর আগে। আজকের ঝিনাইদহ থেকে অনেকটাই ভিন্ন ওই সময়ের ব্যাপারটা। ছোটবেলা থেকেই অবারিত স্বাধীনতা পেয়ে বড় হয়েছি। প্রচন্ড চঞ্চল আর দুষ্টু ছিলাম আমি। আর ওই ব্যাপারটা আমার বড় হয়ে ওঠার ব্যাপারে দারুন প্রভাব ফেলেছে। আর ঝিনাইদহের খোলামেলা বিস্তীর্ণ পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা আমার জন্য একটা বিশেষ ব্যাপার হিসেবে কাজ করেছে, হয়ত আমার অগোচরেই।
লিখতে গিয়ে হঠাৎ সুনিল গঙ্গোপাধ্যায় এর অর্ধেক জীবন এর কথা মনে পড়ে গেল। ভদ্রলোক নিজের জীবন নিয়ে এত বড় একখানা বই কিভাবে লিখে ফেললেন ভাবতে গিয়ে অবাক হয়ে যাচ্ছি। যাইহোক ব্যাপারটা চাট্টিখানি নয় আর যাই হোক! আমার স্কুল ছিল আগুনিয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। পড়শোনায় মোটামোটি ছিলাম যদিও খুব একটা সময় দিতামনা পাঠ্যবই এ। আমার দাদা ছোটবেলায় বই নিয়ে আসতেন আমার জন্য মনে পড়ে। বইগুলা পড়ার চেয়ে টিনের চাল দিয়ে পড়া বৃষ্টির পানিতে ওগুলা ভিজিয়ে ফেলাতেই বেশি আগ্রহ ছিল আমার! এত দুরন্ত ছিলাম যে ছোটবেলায় কখনও নিজের বাড়িতে ঘুমাতাম না, সন্ধ্যা হলে বাসার সবাই যখন পড়তে বসত আমি চলে যেতাম আমাদের বাড়ির পাশের বাড়ি যেখানে আমার চাচাদের বসবাস। আমার পড়াশুনাটা হত ওখানেই। বলা বাহুল্য পড়াশুনার চেয়ে দুষ্টুমিটা কম হতনা!
স্কুলের খেলাধুলা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমার অংশগ্রহন ছিল নিয়মিত। এই হই হুল্লোড়, খেলা আর গানকবিতা নিয়ে প্রচুর সময় কেটেছে। আজ মনে হচ্ছে এগুলো আমাকে নির্দিষ্ট কোন স্কিল হয়ত শেখায়নি, কিন্তু আমার মধ্যে একটা মানসিক বিকাশ ঘটাতে দারুন প্রভাবিত করেছে। ছোটবেলায় আমার প্রথমদিকের শিক্ষক এবং ভাবগুরু হরসিত স্যার এর কথা না বললেই নয়। উনি যখনএ স্পোর্টস এর অনুষ্ঠান এর সময় আমার নামটা উচ্চারন করতেন আমার মনে হত আমি মনে হয় উল্কার মত গতিতে দৌড়ে সবাইকে ছাড়িয়ে যাব! ছেলেবেলার সব স্মৃতি হয়ত বলার মত নয়। কিছু স্মৃতি একান্তই নিজের!
হাইস্কুলে ওঠার পর আরেকটু বড় গন্ডি পেলাম আমি। মেলামেশা হল আশেপাশের আরও কয়েক গ্রামের ছেলেদের সাথে। দুরন্তপনা কিন্তু কমেনি মোটেই! স্কুলের পাশে ভিসিআর এর দোকানে গিয়ে এত বেশি সিনেমা দেখা হত যে মাঝে মাঝে স্যাররা আমাকে ক্লাসে না পেয়ে বন্ধুদের পাঠিয়ে দিতেন আমাকে ভিসিআর এর দোকান থেকে ধরে আনার জন্য! আমি কখনও স্কুলের স্যারদের কাছে প্রাইভেট পড়তাম না। নিজের পছন্দমত আমার গ্রামের স্যারদের কাছে পড়তাম। এদের মধ্যে আসাদ ভাই আর ফরিদ ভাই আমার চিন্তা-চেতনা দারুন ভাবে প্রভাবিত করেছেন। সে সময় ওনাদের মত মানুষদের সাথে মেশার কারনে আমি জীবনে অনেকটা এগিয়ে গেছি যেন। সে সময়টাতে গুগল এর বালাই ছিলনা। পাশ্চাত্যের দেশগুলা নেটওয়ার্ক সোসাইটি হিসেবে গড়ে উঠেছে অনেক যুগ ধরে। সেখানে ওই সময় ইন্টারনেট এর রাজত্ব শুরু হয়ে গেলেও বাংলাদেশে ওসবের বালাই ছিলনা। তো সে সময় দুটা ভাল কথা জানার জন্য আর জ্ঞানচক্ষু খোলার জন্য এরকম মানুশের সাথে মেশাটা ছিল একটা বাড়তি সুবিধা।
হাইস্কুল পাশ করি ২০০১ সালে। কলেজে ভর্তির সময় বাবা ধুমপান ও রাজনীতি মুক্ত ঝিনাইদহ শিশুকুঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজে আমাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন। ওনার মতে আমার মত দুরন্ত ছেলে সাধারন কলেজে পড়লে নির্ঘাত নষ্ট হইয়ে যাবার ভয়! কলেজটা ছিল কিছুটা ক্যাডেট কলেজের মত নিয়মকানুন মানা এক প্রতিষ্ঠান। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকেই মূলত পরিচালিত হত । এরপর ঢাকা ভার্সিটিতে এসে ভর্তি হয় সয়েল ওয়াটার এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিপার্টমেন্টে। কিছুদিন পড়ে ভাল লাগেনা এই শাস্ত্রটা আর! সারাজীবন মাটির সাথে কাটিয়ে মাটি নিয়ে আবার এত কাণ্ডকারখানা বাহুল্য মনে হতে থাকে আমার কাছে। পরের বছর আবার পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হই কুষ্টিয়া ইউনিভার্সিটিতে ইনফর্মেশন এন্ড কমিউনিকেশান ইঞ্জিনিয়ারিং-এ। এখান থেকে বিএসসি এবং এমএসসি শেষ করি আমি।
এরপরের গল্পটা দ্রুত এগিয়ে যায়। ইউনিভার্সিটি শেষ করে ঢাকায় আসি চাকরির খোঁজে। রিভ সিস্টেমস এ সিভি ড্রপ করি এক বন্ধুর মাধ্যমে। জয়েন করি সফটওয়ার সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। এখানে জয়েন করার পর এথিকাল হ্যাকিং, সাইবারসিকিউরিটি সহ নানা বিষয়ে পড়াশোনা করা হয়েছে আমার। এরপর একে প্রতিষ্ঠানে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, ডেপুটি ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর মার্কেটিং টিম লিড দিয়েছি। টেকনিকাল নানা দিক দেখা যখন আমার কাজ এর মধ্যে সিইও আজমত ইকবাল একদিন হঠাত করে ডেকে বললেন “শামীম, তুমি আমাদের মার্কেটিং টিম টা লীড দাও”। প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলেও পড়ে ভাবলাম দায়িত্ব তাকেই দেওয়া হয় যে পালন করতে সক্ষম।
তো প্রথম যখন মার্কেটিং এর কাজ শুরু করি আমার সামনে গুগল ছাড়া সম্বল কিছুই ছিলনা! গুগল আর ২ জন সহকর্মীকে নিয়ে শুরু করলাম মার্কেটিং এর যাত্রা। পড়ে আমার উপলদ্ধি হয়, মার্কেটিং আসলে সাইকোলজি আর মানুষের মন নিয়ে একটা খেলা, আর কিছুই না। মার্কেটিং এর বিচিত্র জগতে বিচরন করতে গিয়ে আজও নানা নতুন জিনিষ শেখা হয় হঠাৎ করে।
১০ বছরের এই কর্মজীবনে অনেক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কিছু দক্ষ এবং অসাধারন মানুষের সাথে মেশার সুযোগ হয়েছে আমার যেমন রিভ সিস্টেমসের গ্রুপ সিইও এম রেজাউল হাসান, সিইও আজমত ইকবাল, রায়হান ভাই আমাকে সবসময় অনুপ্রানিত করেছেন নিজেকে নানা দিকে ডেভেলপ করার জন্য। এছারাও আমার প্রথম বস নির্মলেন্দু দাদা-র কথা মনে পড়ছে যার কাছ থেকে লিডারশিপ ম্যানেজমেন্ট এর নানা দিক সম্পর্কে জ্ঞানলাভ হয়েছে আমার।
আজ একজন ভাল মানুষ হিসেবে নিজেকে সামনে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমি চাই বাংলাদেশের ডিজিটাল মার্কেটিং শিল্পটাকে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যেতে। বিপুল সম্ভাবনাময় এই খাতে টেকনিকাল এবং আর্টিস্টিক দুইটি দিকেই আমাদের অনেক পথ পাড়ি দেওয়া এখনও বাকি। এই হল আমার সংক্ষিপ্ত জীবনের গল্প।
গল্পটা সামনে কোনদিকে যাবে তা হয়ত এই মুহূর্তে আমার অজানা, কিন্তু সামনে আরও একদিন যখন জীবনের গল্প বলতে বসব, আরও দারুন একটা গল্প যেন বলতে পারি, সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই আমার প্রার্থনা।
অবশেষে বলবো –
“লোভে পাপ পাপে ইঞ্জিনিয়ার
তাইতো আইসিটি পড়ে আজ আমি মার্কেটার | ”
Hafiz
ভাইয়ের জীবনের গল্প এ টু জেড পড়লাম। কী সুন্দর সাবলিল লেখা। মাটির গন্ধ আছে বস। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমি নিশ্চয় কোন উপন্যাস পড়ছি। আপনার লেখার ভক্ত হয়ে গেলাম বস। আশা করছি সামনে আরো জীবন ইতিহাসের গল্প পাব। আপনি নিশ্চয় বাংলাদেশের ডিজিটাল মার্কেটিং এর ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হবেনই হবেন। মন থেকে বলছি বস। কারন এখানে উদ্দেশ্য আছে সৎ, আর যতক্ষন উদ্দেশ্য থাকে সৎ ততক্ষন আল্লাহ সাথে থাকেন।
হাফিজ,
মাগুরা
Shamim Hussain
Thank you 🙂
Md Abdul Haque
পুরো লেখাটি পরলাম। জীবনের গল্পটা যেমন প্রেরণা দিলো তেমনি লেখাটি অনেক ভালো হইছে।
Shamim Hussain
Thank you 🙂
Bappy
Awesome hoice vaiya
Shamim Hussain
Thank you 🙂
Niloy
আপনার দেখি লেখার হাতও অসাধারণ!
Shamim Hussain
Thank you 🙂
Jonayed Ahmed
shamim vai apnar life story pore khob valo laglo .. ami nijer proti akti atto bisshas holo… abosese ,, ami to valana vala loiai khako…
Rakibul Islam
Shamim Vay, God bless you.
Jahangir Alom Minto
Amazing story and I am really impressed. I want to build up my career as Digital Marketer like you. Thanks a lot vaiya.
akash61
Ani to vablam r o kichu ache …jkhn dekhi niche giye otuku akhn e sesh hoye jabe kharap lagchilo…samne r o chacchi vai….jibonta asole vabi ak hoy r ak arokom hoy beshirvag somoy
Shafaet Shafaet
অনেক সুন্দর লেখা, প্রেরণার উৎস এবং বলা যায় আহা কী দুর্দান্ত জীবন।
Salim Reza
wonderful Writer. Best fertilize the conclusions.
রিপন হোসেন রবি
অসাধারণ লাগলো ভাই। আশা করি একদিন আপনার হাত ধরে বাংলাদেশ ডিজিটালের দিক থেকে অন্যতম ভুমিকা রাখবে।
Sahidul
Vaiya apnar ai life story ta onek monojog diye porlam, onek valo laglo vaiya, amar bashao kushtia
mamunul
Sir, you are great.
Hasibul Shanto
onk valo laglo vaia pore a
sabbirrana
Vai Valoy Laglo Apnar Jibon, Golpo ta
Methun
শামিম ভাই আপনি একজন অল রাউন্ডার বস । কবির মত বর্ননা আবার ইন্জিনীযার এর পর আবার ডিজিটাল মারকেটার ,,,, তবে ভাই আপনার কথা গুলো দারুন এই রকম টেইনার পাইনি আজো ,,,,,,, সেলুট বস
Shamsul Islam
You are pioneer of modern digital marketing arena.
wish you good health and peaceful life a head.
al mamun
বস, আলহামদুলিল্লাহ, প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তি কারনেই আপনাকে আল্লাহ আপনার যোগ্য সম্মানটুকু দিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ, আপনার স্বপ্ন এর হাত ধরেই বাংলাদেশে অনেক উদোক্ত্যা তৈরি হচ্ছে এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটা বিপ্লব ঘটবে।
itmalibd
goog