আমরা এমন একটা সময়ে বসবাস করছি যেখানে দুই আঙ্গুলের ইশারায় সব কিছু হয়ে যায় । যেমন ধরেন – আপনার প্রচন্ড ক্ষুধা লাগছে, জাস্ট ফুডপান্ডাতে গিয়ে ২-৩ টা বাটন চাপ দিলেই ৩০ মিনিটের মধ্যে খাবার আপনার সামনে এসে হাজির হবে । অথবা ধরেন কারো সাথে ডেটিং মারতে চান, জাস্ট টিন্ডার বা বাডুতে গিয়ে ২-৩ টা বাটন চাপ দিলেই ডেটিং কমপ্লিট । আবার ধরেন আপনি জানতে চান, বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার দুরুত্ব কত – জাস্ট গুগলে কি লিখে দেন ‘Bangladesh to USA distance’ মুহূর্তের মধ্যেই আপনার সামনে হাজির হবে ।
ঠিক এই দ্রুত পাওয়ার বিষয় গুলোই আমাদের মন ও মস্তিষ্কে এমন ভাবে সেট হয়েছে যে, আমরা এখন সব কিছুই খুব দ্রুত পেতে চায় । চাওয়া ও পাওয়ার দুরুত্ব এখন শূন্যের কাছাকাছি হলেই যেন ভালো লাগে ।
কিন্তু সফলতা কি কখনই এত দ্রুত পাওয়া যায়? আর সেই সফলতার মজাটা কি উপভোগ্য হয় ? না হয় না । আসুন একটা উদাহরণ দেখি – মনে আছে ছোটবেলায় স্কুলের ভূগোল ক্লাসে ইয়া বড় একটা ম্যাপ হাতে নিয়ে বন্ধুরা মিলে পৃথিবীর সব চেয়ে ছোট্ট দেশ ভ্যাটিকান সিটি খুঁজে বের করতাম । পুরা ম্যাপ চোষে বেড়িয়ে যখন খুঁজে পেতাম তখন কি যে আনন্দ হতো, তা কি ভাষায় প্রকাশ যায়? এটাই হলো সফলতার আনন্দ ।
আমরা আসলে সফল হতে চাই কিন্তু সফলতা জিনিস টা কি সেটাই জানি না আবার সফল হতে হলে কি কি করা দরকার, কি রকম মাইন্ডসেট দরকার সেটাও জানি না ।
বিশ্ব বিখ্যাত সেলস ট্রেইনার ও পাবলিক স্পিকার, টপ হপকিন্স বলেছিলেন – ‘তুমি তোমার সারাটা জীবন সাফল্যের পেছনে না ছুঁটে, একবার ৫ মিনিট এক জায়গায় বসে ডিফাইন করো, সাফল্য জিনিসটা কি’ ।
সাফল্য হওয়া মানে আসলে জাকারবার্গ হওয়া না, যে আপনাকে ফেসবুকই বানাতে হবে । কেউ ফেসবুকের মাধ্যমে নিজের কোম্পানির প্রোডাক্ট সেল করে সফল হয়েছে, কেউ ফেসবুকে কনটেন্ট ক্রিয়েট করে সফল হয়েছে, কেউ ফেসবুকে ইনফ্লুয়েন্সার হয়ে সফল হয়েছে কেউবা আবার ফেইসবুক মার্কেটিং এক্সপার্ট হয়ে অন্যের সার্ভিস দিয়ে সফল হয়েছে ।
আমরা সফল হওয়া মানেই বেশি বেশি টাকা উপার্জন করাকে বুঝি । টাকা আসলে সব কিছু নয় টাকা জাস্ট সব কিছুর অংশ মাত্র । টাকা দিয়ে হয়তো দামি ওয়েডিং রিং কিনতে পারবেন কিন্তু টাকা দিয়ে ভালো মনের মানুষ পাবেন না ।
একবার হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা জিম ক্যারি বলেছিলেন – ‘আমি মনে করি পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের ধনী এবং বিখ্যাত হওয়া উচিত এবং তারা সারা জীবনে যা যা স্বপ্ন দেখেছে তার সব কিছু করতে পারা উচিত যাতে তারা বুঝতে পারে যে এটা সমাধান নয়’ ।
তাহলে সাফল্য জিনিস টা কি ? সাফল্য হলো আপনি ভালোবেসে যেটা হতে চান বা পেতে চান, সেটা পাওয়া বা হওয়া, যা আপনাকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি ও সুখী হওয়ার অনুভূতি দেয় ।
এবার আসা যাক আসল কথায় –
আমরা সবাই ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা লাখ লাখ কামাতে চাই এবং এটাকেই আমরা সফলতা মনে করি । শুধু তাই নয়, এই সফলতা আমরা খুব দ্রুত পেতে চাই ঐ যে দুই আঙ্গুলের ইশারায় যেমন খাবার চলে আসে ওই রকম । সফলতা হলো একটা প্রক্রিয়ার ফসল যেটা রাতারাতি বা আঙ্গুলের ইশারায় সম্ভব না ।
আমরা ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হতে চাই কিন্তু তার আগে আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে, ভালোলাগার একটা বিষয়কে চুজ করে সেই বিষয়ে স্কীলড হতে হবে । তারপর কাজ শুরু করতে হবে, কাজটা পেশাদারিত্বের সাথে করতে হবে, বড় স্বপ্নটাকে ছোট ছোট ভাবে ভাগ করে সেটা অর্জন করার মাধ্যমে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবেকিন্তু এটা আমরা অধিকাংশই করি না । আমরা রাতারাতি বিল জাকারবার্গ হতে চাই ।
হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন – ‘সবাই যীশু হতে চাই কিন্তু কেউ ক্রূশবিদ্ধ হতে চাই না’ ।
তাই চারিদিকে হাজারো কম্পিটিশনের মধ্যে নিজের লক্ষ্যকে মাথায় রেখে এগিয়ে যান যেটা আপনাকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি ও সুখী হওয়ার অনুভূতি দিবে ।
সফলতার কোনো পিন-পাসওয়ার্ড নেই । তাই নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিৰ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলেই কেবল সফল হবেন ।
মনে রাখবেন – এখন দ্বিতীয়ার্ধের খেলা চলছে ভুল করে আগের গোলপোস্টে বল মারলে নিজেরই ঢুকে যাবে ।
2 responses on "সফলতার কি কোনো পিন-পাসওয়ার্ড আছে?"
Leave a Message
You must be logged in to post a comment.
ভাই এখন দ্বিতীয়ার্ধের খেলা চলছে বলিতে কি বুঝিয়েছেন?
বেশির ভাগ মানুষ আমরা গল্প পড়ে, গল্পটাকে গল্প ভেবেই ছেড়ে দেই। কথাগুলো বাস্তব জীবনে তা কাজে লাগায় না।_এই জাগাটাতেই মানুষ শুরুর ভূলটা করে থাকে।
বিচারগান/পালাগানের কথা অনেকে বুঝে আবার অনেকে বুঝে না। যারা বুঝে তারা পুরো গানটা উপভোগ করে। ঠিক এটা গল্প হলেও এই গল্পের কথা গুলো যারা বুঝবে এবং নিজের জীবনে চলার পথে কাজে লাগাবে সে লাভবান হবে আশা করি।
ধন্যবাদ স্যার!- এত সুন্দর একটি মোটিভেশন পোস্ট করার জন্য।